(CLICK ON CAPTION/LINK/POSTING BELOW TO ENLARGE & READ)

Sunday, February 24, 2013

গোপনেই, রাতভর খেটে জাঠাকে অভ্যর্থনার প্রস্তুতি নিলো বক্সিরহাট |



গোপনেই, রাতভর খেটে জাঠাকে অভ্যর্থনার প্রস্তুতি নিলো বক্সিরহাট |

পীযূষ ব‌্যানার্জি

বক্সিরহাট (কোচবিহার), ২৪শে ফেব্রুয়ারি— দু’-দুটো গেট তৈরি করে রাখা। গোটা ছয়েক ফ্লেক্স তৈরি হয়ে পড়ে আছে। শ’খানেকের ওপর লালঝান্ডা স্রেফ টাঙানোর অপেক্ষা। হাতে হাত মিলিয়ে হাজারো চেনফ্ল্যাগ পথ সাজাতে তৈরি।

প্রস্তুতিতে কোনো খামতি নেই। তবু আসাম-বাংলা সীমান্তের গঞ্জ বক্সিরহাট কোথায় যেন থম মেরে আছে।

সংগ্রাম বার্তা জাঠার প্রস্তুতি সারা হয়েও গোটা বক্সিরহাট তবু খাঁ খাঁ করছে। রবিবারের সন্ধ্যাতেও গোটা তল্লাটে ‘সংঘর্ষ সন্দেশ জাঠা’কে স্বাগত জানানোর ছিটেফোঁটা চিহ্ন নেই।

কোচবিহার থেকে বক্সিরহাট যাওয়ার সময়ই জাঠাকে স্বাগত জানানোর জন্য পরিকল্পনার কথাই শোনাচ্ছিলেন সি পি আই (এম)-র বক্সিরহাট জোনাল কমিটির সম্পাদক ধনঞ্জয় রাভা। কীভাবে গতকাল গুয়াহাটি থেকে রওনা দেওয়া জাঠাকে আসাম সীমান্তের তেনালি মোড় থেকে স্বাগত জানিয়ে আনা হবে বক্সিরহাট জোনাল দপ্তরে। গোটা রাস্তার কোথায় চেনফ্ল্যাগ টাঙানো হবে, কত সংখ্যায় লালঝান্ডা দিয়ে এলাকা সাজানো হবে সব কিছু শুনতে, শুনতে বক্সিরহাটে পৌঁছাতেই সব ভোঁ ভাঁ। গোটা এলাকায় জাঠা নিয়ে কিচ্ছুটি নজরে পড়ছে না।

হাতে সময় বলতে রাতটুকু। সোমবার সকালেই জাঠা পৌঁছে যাবে বক্সিরহাটে। বাংলার সীমান্ত থেকে মাত্র দেড় ঘন্টার দূরে ধুবড়িতে জাঠার যাত্রীরা এদিন রাত্রিবাসের খবরও কারোর অজানা নেই। তাহলে কাল সকালের মধ্যে প্রস্তুতি হবে কী করে? 

‘‘চিন্তা করবেন না। কাল সকালে বক্সিরহাটের মানুষের ঘুম ভাঙার আগেই সেজে উঠবে গোটা এলাকা। যেমনটা বলেছিলাম, লালঝান্ডা, চেনফ্ল্যাগ, ব্যানার, ফ্লেক্সে সংগ্রামের বার্তা নিয়েই আমরা বাংলার মাটিতে স্বাগত জানাবো জাঠাকে।’’ প্রত্যয়ী শোনায় ধনঞ্জয় রাভার গলা। সেই প্রস্তুতি চলছে। তবে প্রকাশ্যে নয়। গোপনে। একটু হলেও লোকচক্ষুর আড়ালে।

আসলে এটাই এরাজ্যের অন্যান্য অনেক এলাকার সঙ্গে তুফানগঞ্জ, বক্সিরহাট এলাকার বাস্তবতা। গতকালই তো তুফানগঞ্জের বামপন্থী পৌরবোর্ডের সদস্যদের চরম হেনস্তা হতে হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ধর্মঘটে অংশ নেওয়া পৌরকর্মচারীদেরও। আর বক্সিরহাট?

২০১১সালের ১৩ই মে ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকে সব মিলিয়ে ছয়, সাতবার আক্রমণ হয়ে গেছে পার্টি দপ্তরে। নেতা থেকে কর্মী এমন কেউ বাদ নেই তৃণমূল কংগ্রেসের আক্রমণের তালিকা থেকে। ‘‘এই যে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাকর্সবাদী) বক্সিরহাট জোনাল কমিটি লেখা সাইনবোর্ড দেখছেন এটা বাইরে টাঙানো যাচ্ছে না। প্রতিবার বোমা, পাথর নিয়ে হামলার সময় ভেঙে পাশের খালে ফেলে দিয়ে গেছে। একই অবস্থা শহীদ বেদীর পতাকা তোলার লোহার পাইপের। এখন তাই এগুলো আর বাইরে রাখি না।’’ জোনাল দপ্তরে পিছনে হলঘরে রাখা সাইনবোর্ড, শহীদ বেদীকে দেখিয়ে জানান এলাকার পার্টিকর্মীরা।

প্রকাশ্যে এখানে এলাকায় দপ্তরের পরিচিতি রাখতে দেওয়া হয় না। বিকাল ৪টা থেকে বড়জোর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত যেখানে পার্টি জোনাল কমিটির দপ্তরকে খুলে রাখতে বাধ্য হন পার্টিকর্মীরা, সেখানে জাঠাকে স্বাগত জানানোর কাজ করাটা যে কতটা কঠিন তা এলাকার পার্টিকর্মীরাই ভালো জানেন। তাহলে কী কোনো রকমে জাঠাকে বিদায় করেই শেষ হবে অনুষ্ঠান?

না। তার কোনো সম্ভাবনা রাখছে না সি পি আই (এম) কর্মীরা। ‘‘সন্ত্রাসের আবহাওয়ার কারণেই মানুষের কাছে জাঠার জন্য সাজানোর কাজ করতে পারলাম না। দু’দিন আগে থেকে করলে সব নষ্ট করে দিত। তাই এলাকা সাজানোর সব কাজ গুছিয়ে নিচ্ছি। রাত পার করে সোমবার সকালেই সব উপকরণ দিয়ে সাজিয়ে নেব।’’ বলছিলেন বক্সিরহাটের পার্টি নেতৃত্ব।

এদিন কোচবিহার জেলা সি পি আই (এম)র দপ্তরে এই নিয়েই এক সাংবাদিক বৈঠকে পার্টির জেলা কমিটির সম্পাদক তারিণী রায় বলছিলেন,‘‘জাঠা নিয়ে আমরা আমাদের কর্মসূচীর কথা লিখিতভাবে জেলার পুলিস, প্রশাসনকে জানিয়েছি। চলতি সন্ত্রাসের কথা জানিয়ে ফের পুলিসসুপারকে আবার আমাদের তরফ থেকে অবহিত করেছি।’’

সোমবার সাড়ে ১০টা নাগাদ গুয়াহাটি থেকে শুরু হওয়া জাঠা প্রবেশ করবে এরাজ্যে। জাঠার সঙ্গে থাকছেন আসামের প্রবীণ সি পি আই (এম) নেতা উদ্ধব বর্মণ। বক্সিরহাটে জাঠাকে স্বাগত জানিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য নিরুপম সেন। বক্সিরহাট হয়ে জাঠা যাবে তুফানগঞ্জে। সেখানকার কমিউনিটি হলে আয়োজিত সভায় উপস্থিত থাকবেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃদুল দে। তুফানগঞ্জ হয়ে জাঠা পৌঁছাবে কোচবিহার শহরে। বিকাল ৫টা কোচবিহার শহরের সুকান্ত মঞ্চে আয়োজিত হবে আরও একটি সভা। সোমবার রাতে কোচবিহার শহরেই রাত কাটাবেন জাঠাযাত্রীরা।

মঙ্গলবার সকালে কোচবিহার হয়ে জলপাইগুড়ির ফালাকাটায় পৌঁছাবে জাঠা। গুয়াহাটি থেকে শুরু হওয়া এই জাঠা আগামী ১লা মার্চ কলকাতা থেকে দিল্লির মূল জাঠার সঙ্গে মিলিত হতে চলেছে।

সংগ্রামের বার্তা দেশের রাজধানীতে বয়ে নিয়ে যেতে তাই কোনো খামতি রাখতে চায় না বক্সিরহাট। সন্ত্রাসের আবহের মধ্যেই বাংলা আসাম সীমান্তের এই গঞ্জে চলছে প্রস্তুতি। ধুবড়ি থেকে জাঠা রওনার মুহূর্তে সেজে উঠবে আসামের ধুবড়ি আর কোঁকরাঝাড় জেলার লাগোয়া বক্সিরহাট। জাঠার যাত্রীদের স্বাগত জানাতে জড়ো হবেন এলাকার মানুষও।

No comments:

Post a Comment