(CLICK ON CAPTION/LINK/POSTING BELOW TO ENLARGE & READ)

Monday, February 25, 2013

মিছিলে নেমেই মৌলবাদী বন্‌ধ ভাঙলো বাংলাদেশ |



মিছিলে নেমেই মৌলবাদী বন্‌ধ ভাঙলো বাংলাদেশ |

আতাউর রহমান

ঢাকা, ২৪শে ফেব্রুয়ারি— ছিলো প্রবল অশান্তির উসকানি। হরতালের সমর্থনে মুসলিম মৌলবাদীদের চোখ রাঙানিও ছিল সর্বত্র। সমস্ত কিছু উপেক্ষা করেই রবিবার পথে নামলো বাংলাদেশ। ফুৎকারে প্রত্যাখ‌্যান করলো জামাত-সহ ইসলামী দলগুলির ডাকা এদিনের হরতাল। এদিন আরো একবার জানান দিলো মৌলবাদের বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের তীব্র জেহাদ। 

কয়েক জায়গায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ছাড়া তেমন কোনো আঁচড়ই কাটতে পারলো না এদিনের হরতাল। রাস্তায় নেমে জামাত-সহ ইসলামী দলগুলির ডাকা হরতালকে প্রত্যাখ‌্যান করল গোটা দেশের সাধারণ মানুষ। গোটা দেশের জনজীবনে তেমন প্রভাব পড়েনি হরতালের। 

অন্যান্যদিনের মতই ব্যস্ত ছিল রাজধানী ঢাকা। শহরে দোকানপাট খুলেছে, রাস্তায় যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। শহরজুড়ে ছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিভিন্ন রাস্তায় নিরাপত্তারক্ষীরা টহল দিয়েছেন। বাস, অটো, রিকশা চলেছে। লঞ্চের চলাচলও স্বাভাবিক ছিল। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শেয়ার বাজারের স্বাভাবিক কাজ হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরেও কোনো প্রভাব পড়েনি এদিনের হরতালের। ব্যাঙ্ক সহ সমস্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানই খোলা ছিল। 

হরতাল প্রত্যাখ্যান করে ঢাকায় মিছিলে শামিল হন কয়েক হাজার মানুষ। হরতালের বিরুদ্ধে পথে নামতে শনিবারই ডাক দিয়েছিল গণজাগরণ মঞ্চ। শাহবাগ আন্দোলনকে ঘিরে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের ডাকা এদিনের মিছিলে হেঁটেছেন বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সদস্যরা। মিছিলে ছিলেন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর এবং নানান পেশার মানুষ। স্লোগানে, গানে উদ্দীপ্ত এই মিছিল শুরু হয় সকাল পৌনে দশটা নাগাদ। শহরে বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে ১১টা নাগাদ শাহবাগে শেষ হয় এই মিছিল। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে ও জামাত-সহ তার ছাত্র সংগঠন, ছাত্র শিবিরকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে দৃপ্ত কন্ঠে স্লোগানে গলা মেলান হাজার হাজার মানুষ। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামাতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় প্রত্যাখ্যান করে ফাঁসির দাবিতে ফেব্রুয়ারির ৫তারিখ থেকে এই আন্দোলন শুরু হয়। এই দাবি প্রথমে উত্থাপন করে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্ক। পরে তা জনতার আন্দোলনে ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। আন্দোলনের উৎকেন্দ্র হয়ে ওঠে শাহবাগ চত্বর। বাংলাদেশের গ্রাম থেকে শহর — সর্বত্র জামাত সহ মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলনের অনন্য নজির তৈরি করতে চলছে মনে করছে অভিজ্ঞমহল। 

এদিকে, ইসলামী দলগুলির ডাকা হরতালকে ঘিরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটলো মানিকগঞ্জ জেলায়। এদিন মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় গোবিন্ধল গ্রামে সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন মহিলা আছেন বলে পুলিস সূত্রে জানা গেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ৫০জন। আহতদের মধ্যে ১৬জন পুলিস কর্মীও আছেন। জামাত সহ ১২টি ইসলামী দলগুলির ডাকা এদিনের হরতালকে সমর্থন জানায় প্রধান বিরোধীদল বি এন পি। তবে, কয়েকটি বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ ছাড়া এদিনের ধর্মঘট দেশজুড়ে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি 

এদিন সকাল সাতটা নাগাদ মানিকগঞ্জ-সিঙ্গাইর সড়কে অবরোধ করে হরতালকারীরা। রাস্তার ওপর থেকে অবরোধ ওঠাতে গেলে পুলিসের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। পুলিসের দিকে ইটপাটকেল ছোঁড়ে অবরোধকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিস লাঠি চালায়। পুলিস রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসও ছোঁড়ে। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় পুলিস বেশ কয়েক রাউণ্ড গুলি ছোঁড়ে। সংঘর্ষে অন্তত ৩৫জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার মানিকগঞ্জ জেলায় হরতালের ডাক দিয়েছে ইসলামী দলগুলি। ওই দিন গোটা দেশে প্রতিবাদ আন্দোলন হবে বলে জানানো হয়েছে দলগুলির পক্ষ থেকে। 

এদিনের হরতালকে ঘিরে বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর চালায় ইসলামী দলগুলির কর্মী সমর্থকরা। তাদের হামলায় বেশ কয়েকটি দোকান, বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকটি জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করে। কক্সবাজারেও সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় একটি টি ভি চ্যানেলের সূত্রে জানা গেছে, এখানে হরতালকারীদের সঙ্গে আওয়ামি লিগের সমর্থকদের সঙ্ঘর্ষে অন্তত ১৫জন আহত হয়েছে। গোটা দেশে অবরোধ ও হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে অন্তত ৫০জন গ্রেপ্তার হয়েছে। 

শাহবাগের আন্দোলনে রাজাকারদের ফাঁসি ও জামাতকে নিষিদ্ধ করার দাবি দেশজুড়ে আলোড়ন তুলছে। তার পালটা জবাব দিতেই এদিনের হরতালের ডাক দেয় মৌলবাদীরা। তাদের পাশে বি এন পি দাঁড়িয়ে যাওয়ায় হরতালকে ঘিরে প্রবল আশান্তির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিলো গোটা দেশেই। সমস্ত কিছু আতঙ্ক কার্যত দুরমুশ করেই মৌলবাদকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিল বাংলাদেশ। শাহবাগের বাংলাদেশ। 

No comments:

Post a Comment