(CLICK ON CAPTION/LINK/POSTING BELOW TO ENLARGE & READ)

Sunday, February 24, 2013

তুফানগঞ্জ পৌরসভা অস্থায়ী নিয়োগে ২৪ জনের নাম জোর করে লিপিবদ্ধ করালো তৃণমূল


তুফানগঞ্জ পৌরসভা অস্থায়ী নিয়োগে ২৪ জনের নাম জোর করে লিপিবদ্ধ করালো তৃণমূল 

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার, ২৪শে ফেব্রুয়ারি — দীর্ঘ সাড়ে ১১ঘণ্টা একটি ঘরের মধ্যে চেয়ারম্যানসহ ৮ জন কাউন্সিলরকে আটকে রেখে তৃণমূলের ২৪ জন সক্রিয় কর্মীকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত বোর্ড মিটিংয়ের খাতায় লিপিবদ্ধ করানো হলো। কোচবিহার জেলায় বামফ্রন্ট পরিচালিত তুফানগঞ্জ পৌরসভায় শনিার এই নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। ওই দিন ছিলো পৌরসভার বোর্ড মিটিং। তুফানগঞ্জ শহরে তৃণমূলের দলীয় সভাপতি তাঁর প্যাডে ২৪ জনকে অস্থায়ী নিয়োগের জন্য নির্দেশ দিয়ে একটি চিঠি পাঠান পৌরসভার চেয়ারম্যান সুভাষ ভাওয়ালকে। সরকারী যাবতীয় নিয়মনীতি উপেক্ষা করে এভাবে নিয়োগের প্রশ্নে রাজি হননি চেয়ারম্যানসহ বামফ্রন্ট কাউন্সিলররা। কিন্তু বোর্ড মিটিংয়ে তৃণমূলের ৪ জন কাউন্সিলর ওই ২৪ জন দলীয় কর্মীকে নিয়োগের জন্য চাপ দিতে থাকেন। অবশ্য তাঁরা সফল হননি। শেষে বোর্ড মিটিং ছেড়ে বেরিয়ে যান তৃণমূলের ৪ জন। শহরের ঐতিহ্যবাহী হেরিটেজ ভবনে সভা চলছিলো। ৪ জন কাউন্সিলর বেরিয়ে যাওয়ার পর বেশকিছু তৃণমূলকর্মী বোর্ড মিটিংয়ে ঢুকে পড়ে। চেয়ারম্যানসহ ৮ জন কাউন্সিলরের মোবাইল ফোনে কল করতে বাধা দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ পুলিস এবং প্রশাসনের কর্তাদের সামনে রেখে ৪ জন কাউন্সিলর, তৃণমূল কর্মীরা জোর করে বোর্ড মিটিংয়ের খাতায় ২৪ জনের নিয়োগের সিদ্ধান্ত লিখিয়ে নেন। এভাবে বলপূর্বক, বেআইনীভাবে ২৪ জনকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত লিখিয়ে নেওয়ার তীব্র নিন্দা করেছেন সি পি আই (এম) কোচবিহার জেলা কমিটির সম্পাদক তারিণী রায়।

রবিবার জেলায় দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে তারিণী রায় ছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তুফানগঞ্জ পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রমেশচন্দ্র সরকার, সি পি আই (এম) জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তমসের আলি, পৌরসভার সি পি আই (এম) কাউন্সিলর বিমল ডাকুয়া এবং কোচবিহার পৌরসভার বিরোধী দলনেতা মহানন্দ সাহা। সাংবদিক বৈঠকে তুফানগঞ্জের পৌরসভার চেয়ারম্যান সুভাষ ভাওয়ালের উপস্থিত থাকবার কথা থাকলেও গতকালের টানা সাড়ে এগারো ঘণ্টা ঘেরাওয়ের পর এদিন তিনি অসুস্থ বোধ করেন। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি বিশ্রামে ছিলেন।

এদিন সকালে চেয়ারম্যান সুভাষ ভাওয়াল তাঁর নিজের বাড়িতে বসে বলেন, তৃণমূলীরা গত কয়েকদিন ধরেই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই ৮১ জন তৃণমূল কর্মীকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগের দাবি করেন। তাঁকে টেলিফোনে হুমকিও দেওয়া হয়।

শনিবার বেলা ১১টায় পৌরসভার ‘হেরিটেজ ভবনে’ কাউন্সিলরদের মাসিক বৈঠক শুরু হয়। তখন থেকেই ঘেরাও কর্মসূচী শুরু হয়। মাসিক সভায় তৃণমূলের বিরোধী দলনেতা বিশ্বজিৎ সাহাসহ তৃণমূলের ৪ কাউন্সিলর দাবি করেন, তৃণমূলের শহর সভাপতি হিরণ্ময় চ্যাটার্জি দলীয় প্যাডে যে ৬ তৃণমূল কর্মীর তালিকা গত ডিসেম্বর মাসে জমা দিয়েছে সেই ৬ জন সহ মোট ২৪ জনকে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করতে হবে। তৃণমূলের অবৈধ দাবির কাছে নতি স্বীকার না করায় বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ সভা থেকে ওয়াক আউট করে ৪ তৃণমূল কাউন্সিলর। এরপরই তৃণমূলকর্মীরা ‘হেরিটেজ ভবনে’ ঢুকে পড়ে ঘেরাও-এ নামে। জল পর্যন্ত খেতে দেওয়া হয়নি। এক সময়ে তৃণমূল কর্মীরা কাউন্সিলরদের চেয়ার পর্যন্ত কেড়ে নেয়। দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হন ৮কাউন্সিলর।

তৃণমূলীদের অমানবিক ব্যবহারে রাত ৭টা নাগাদ অসুস্থ হয়ে পড়েন ২ নম্বর ওয়ার্ডের ৭৫ বছর বয়সী প্রবীণ কাউন্সিলর ধীরেন সাহা অসুস্থ হয়ে পড়লে অ্যাম্বুলেন্স ডাকতেও বাধা দেয় তৃণমূল কর্মীরা। তখন বাধ্য হয়ে চেয়ারম্যান তাঁর গাড়িতে অসুস্থ কাউন্সিলরকে মহকুমা হাসপাতালে পাঠান। উচ্চ রক্তচাপের রোগী ধীরেন সাহার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় রবিবারও তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

চেয়ারম্যান এদিন বলেন, ২০০৮-২০০৯ সালে স্টেট আরবান ডেভলপমেন্ট এজেন্সির অনুমতি নিয়ে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টে ৭৮ জন কর্মীকে নিয়োগ করা হয়। মাসিক ১৫০০ টাকা মজুরি পান অস্থায়ী শ্রমিকরা। একইভাবে টোল গেট থেকে অর্থ সংগ্রহের জন্য একই মজুরি হারে ২৪ জনকে নিয়োগ করা হয়। প্রতিটি নিয়োগ হয়েছে আবেদনের ভিত্তিতে ইন্টারভিউর মধ্যমে।

অবৈধ নিয়োগের দাবি মেনে না নেওয়ায় রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ ১৯৩২ সালে তৈরি রাজ আমলের হেরিটেজ ভবনের জানালা ভাঙচুর করে ঘেরাওকারিরা। ঐতিহ্যবাহী হেরিটেজ ভবনও রেহাই পায়নি ঘেরাওকারিদের থেকে। মারমুখী তৃণমূলের ৪ কাউন্সিলর রাত ১১টা নাগাদ ফের ফিরে এসে আবার বোর্ডসভা ডাকতে বাধ্য করে। এবং বিরোধী দলনেতা বিশ্বজিৎ দে-র বয়ান অনুযায়ী পুলিসের ওসি এবং অতিরিক্ত মহকুমা শাসকের উপস্থিতিতে লিখতে বাধ্য করা হয়। জোর করে সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে লিখিয়ে নেওয়ার দাবি মেনে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না বলে চেয়ারম্যান এদিন মন্তব্য করেন।

তুফানগঞ্জ পৌরসভায় অবৈধ নিয়োগের নিন্দা করে কোচবিহার পৌরসভার বিরোধী দলনেতা মহানন্দ সাহা রবিবার বলেন, তৃণমূল ও কংগ্রেস পরিচালিত কোচবিহার পৌরসভায় দীর্ঘদিন ধরে ১৮৬টি শূন্যপদ রয়েছে সেখানে কর্মী নিয়োগের ব্যর্থ পৌরসভা ও রাজ্য সরকার। তৃণমূলীরা রীতিনীতির তোয়াক্কা করে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এদিকে আন্দোলনের নামে দীর্ঘ সাড়ে এগারো ঘণ্টা ঘেরাও এবং হেরিটেজ ভবন ভাঙচুরের নিন্দায় সরব হয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব ও তুফানগঞ্জের বুদ্ধিজীবী মহল।

তুফানগঞ্জের বি জে পি নেতা পুষ্পেন ডাকুয় এদিন বলেন, আন্দোলনের নামে অসভ্যতা বরদাস্ত করা যায় না। ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা দুলাল গোপ বলেন, অবৈধ নিয়োগের জন্য এধরনের হামলা রোধে প্রশাসনের ভূমিকা লজ্জাজনক। আর এস পি নেতা সমীর চক্রবর্তী বলেন, যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গুণ্ডা নিয়ন্ত্রণ করেন তাঁর দলের কর্মীরা তো একাজ করবেই। গুণ্ডামি রুখতে প্রতিরোধ গড়বেন মানুষই।

তুফানগঞ্জের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অমর বসাক বলেন, রাজনীতির বাইরে থেকেও বলছি, আন্দোলনের নামে এধরনের ঘটনা লজ্জাজনক। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ভুল বার্তা গেছে। আরেক শিক্ষাবিদ রতন গাঙ্গুলি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দাবির সমর্থনে আন্দোলন হতে পারে। যেভাবে মানবিক প্রবৃত্তি নিচে নেমে যাচ্ছে ভাবা যায় না। এসব ঠেকাতে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।

No comments:

Post a Comment