সন্ত্রাসের লাইসেন্স
পঞ্চায়েত নির্বাচন এগিয়ে আসছে। আগামী এপ্রিল মাসের শেষ থেকে মে মাসের মধ্যে পঞ্চায়েতের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার কথা। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে নির্বাচনী প্রচার প্রস্তুতি শুরু করেছে বামপন্থীরা। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের লক্ষ্য ছলে বলে কৌশলে দখল করতে হবে তিনটি স্তরের পঞ্চায়েত। সেই কারণে ভয় পাইয়ে দেওয়ার পথ নিয়েছে তৃণমূল। কেন না তৃণমূল নিজেরাই সাধারণ মানুষকে ভয় পায়। সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জবরদখল করার রাজনীতি শুরু করেছে তৃণমূল। সন্ত্রাসের এই রাজনীতি চলছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা থেকে কোচবিহার পর্যন্ত সর্বত্র। কোথাও সি পি আই (এম ) নেতা, কর্মী বা সমর্থককে খুন করা হচ্ছে। শনিবার কোথাও বা সি পি আই (এম)-র নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ওপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে। তৃণমূলের আক্রমণে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার রায়দিঘিতে প্রাণ হারিয়েছেন গরিব কৃষক গোপাল মাকাল। সি পি আই (এম) সমর্থক কমরেড গোপাল মাকালকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে খুন করে তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা। তৃণমূল পরিচালিত মথুরাপুর ২নং পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতির উপস্থিতিতে এবং প্রত্যক্ষ মদতে এই খুন করা হয়। শুধুমাত্র খুনই নয়, সন্ত্রস্ত করে তোলার আরও অনেক পথ নিয়েছে তৃণমূল। ঐ একই দিনে কোচবিহারের তুফানগঞ্জ পৌরসভায় বেআইনীভাবে নিয়োগের দাবিতে সি পি আই (এমর) কাউন্সিলরদের ঘেরাও করে রাখে তৃণমূল। এখানেও পুলিস নীরব দর্শক। ঘেরাও হয়ে থাকা কাউন্সিলর বা চেয়ারম্যান অসুস্থ হয়ে পড়লেও প্রশাসন হস্তক্ষেপের প্রয়োজন বোধ করে না। কারণ তৃণমূল কর্মীদের এই ধরনের হামলা, আক্রমণ, নিগ্রহ, অত্যাচারের লাইসেন্স দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি স্বয়ং। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কুলপি থানার মশামারি এলাকায় ইটভাটার শ্রমিক গোপাল মাঝির চোখ উপড়ে নিয়েছে তৃণমূলীরা। তাঁর অপরাধ সাধারণ ধর্মঘটে শামিল হওয়া। বুধ ও বৃহস্পতিবার ধর্মঘট করার জন্য পরের দিন থেকে কুলপি অঞ্চলের ৪৪টি ইটভাটা বন্ধ রেখেছে তৃণমূলীরা।
বিরোধীদের ওপর আক্রমণ ছাড়াও তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলেও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে বিভিন্ন এলাকা। তৃণমূলের কর্মী ও নেতাদের সঙ্গে থাকছে পরিচিত দুষ্কৃতীরা। দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য এবং তৃণমূলী অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে এরাজ্যে এখন তৃণমূলী নেতা এবং সাধারণ মানুষের কোনও নিরাপত্তা নেই। রিষড়া স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লোকাল ট্রেনের মধ্যে বসে থাকা রিষড়া পৌরসভার তৃণমূলী কাউন্সিলর বিজয় মিশ্রকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে। তাঁকে লক্ষ্য করে দুষ্কৃতীরা গুলি ছোঁড়ে। যাত্রীভর্তি ট্রেন এবং স্টেশনে বেপরোয়াভাবে গুলি চালানোর মত ঘটনা এখনই ঘটছে পশ্চিমবঙ্গে। আক্রমণের লক্ষ্য ঐ কাউন্সিলর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ঐ পৌরসভায় বেআইনী কার্যকলাপ, সিন্ডিকেট গঠন প্রভৃতি নিয়ে তৃণমূলে বিবাদ বেঁধেছে। সেই অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে কাউন্সিলরকে খুন করার চেষ্টাতে দ্বিধা করছে না। রেল স্টেশনে প্রকাশ্যে এই গুলিচালনা খুব স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ সমস্ত মানুষকে আতঙ্কিত এবং সন্ত্রস্ত করে তুলছে। গত বছর ২২শে ফেব্রুয়ারি বর্ধমান শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা হত্যা করেছিলো সি পি আই (এম) নেতা প্রদীপ তা এবং কমল গায়েনকে। জনপ্রিয় এই দুই নেতাকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছিলো তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা। তারপর থেকে এক বছর কেটে গেছে। এই এক বছরের মধ্যে এই তৃণমূল দুষ্কৃতীদের সন্ত্রাস বেড়ে চলেছে গোটা রাজ্যে। দুষ্কৃতীদের নিয়েই দলীয় বাহিনী তৈরি করেছে তৃণমূল। স্কুল, কলেজ, ইউনিয়ন, সমবায় থেকে পৌরসভা পঞ্চায়েত সব নির্বাচনেই গায়ের জোর দেখাচ্ছে তৃণমূল। দুষ্কৃতী বাহিনীদের ব্যবহার করে নির্বাচনে জেতার পরিকল্পনা করেছে তৃণমূল। সন্ত্রাসের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ অর্থও ব্যবহারের চেষ্টা হচ্ছে নির্বাচনে জেতার জন্য। পঞ্চায়েত নির্বাচনের দু’মাস আগে থেকেই সেই সন্ত্রাসের প্রস্তুতিই শুরু হয়েছে ব্যাপকভাবে। মানুষই একজোট হয়ে এই আক্রমণকে প্রতিহত করতে পারে।
No comments:
Post a Comment