(CLICK ON CAPTION/LINK/POSTING BELOW TO ENLARGE & READ)

Sunday, February 24, 2013

মাধ্যমিক শুরুর আগে পরীক্ষার্থীদের ভয় দেখালেন স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী |


মাধ্যমিক শুরুর আগে পরীক্ষার্থীদের ভয় দেখালেন স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী |

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২৪শে ফেব্রুয়ারি— সোমবার শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। প্রায় সাড়ে দশ লক্ষ পরীক্ষার্থী জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসবে। তারা যখন শেষ প্রহরের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, তখনই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বললেন, মাধ্যমিক পরীক্ষা ভণ্ডুল হতে পারে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। কোথা থেকে এমন খবর পেলেন শিক্ষামন্ত্রী, প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নিয়ে সংবাদমাধ্যমে এমন চাঞ্চল্য ছড়িয়ে তিনি এতো বড় মাত্রার আশঙ্কার কথা বললেন কেন, তা নিয়ে রবিবার গুরুতর প্রশ্ন উঠে গেল। 

সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা রাজ্য প্রশাসনের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। কোনো বিশৃঙ্খলা হলে তার যথাযথ মোকাবিলা করাও প্রশাসনেরই দায়িত্ব। শিক্ষামন্ত্রী তার বদলে শঙ্কা ছড়ানোর বিচিত্র পথ নিয়েছেন এদিন। চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করে নিজের দায় ঝেড়ে ফেললেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পরে উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে, অভিভাবকদেরও অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হলো। এ এক বিরল নজির। আগে কোনদিন পরীক্ষার ঠিক কয়েক ঘণ্টা বাকি থাকতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য কখনো কেউ করেননি। 

শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। তিনি আশঙ্কা করেছেন, নাশকতা হতে পারে। শিক্ষামন্ত্রী কেন এমন বার্তা রাজ্যবাসীকে দিলেন, তার কোন ব্যাখ্যা তিনি দেননি। ব্রাত্য বসু যুক্তি দেখিয়েছেন, যারা শিক্ষক নিয়োগ আটকাতে মামলা করতে পারে, তারা সব কিছুই করতে পারে। শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে হরবখত মামলা হয়। বামফ্রন্টের আমলেও প্রচুর মামলা হয়েছে। চাকরি প্রার্থীরা মামলা করেন। যদিও তার জন্য শিক্ষক নিয়োগ কোনদিন আটকে ছিল না। শিক্ষামন্ত্রীর এই দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য সম্পর্কে শিক্ষকমহল এবং শিক্ষাবিদরা বলেছেন, এমন মন্তব্য পরীক্ষার্থীদের অসাড় করে দেয়। পরীক্ষা শুরুর ঠিক আগে শিক্ষামন্ত্রীর উচিত ছিল পরীক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা দেওয়া। সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা হয়েছে সে কথা অভিভাবকদের জানিয়ে তাঁদের ভার কিছুটা মুক্ত করা।

ব্রাত্য বসুর এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে এদিন প্রাক্তন বিদ্যালয় শিক্ষামন্ত্রী পার্থ দে বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রী যে কাজ করলেন, তা ঠিক নয়। পরীক্ষার্থীদের এভাবে ভয় দেখানো ফৌজদারি অপরাধ। পূর্বপরিকল্পিত চক্রান্ত অনুসারেই তৃণমূল এই কাজ করছে। পরীক্ষাব‌্যবস্থা বানচাল করতে আগেই ওরা এই চক্রান্ত করেছে। ক’দিন আগে টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করা ছাত্রদের নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে ওরা গন্ডগোল করেছে। পরীক্ষায় গণটোকাটুকির ব‌্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চাইছে। তৃণমূল কোনো গন্ডগোল না করলে পরীক্ষা ভালোভাবেই হবে।

নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সম্পাদক উৎপল রায় বলেন, পরীক্ষা শুরুর আগেই এমন মন্তব্য কেন? শিক্ষামন্ত্রীর কাছে নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট খবর আছে। সেই গোপন তথ্য তিনি প্রশাসনকে জানান। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে গ্রহণের গ‌্যারান্টি দিন। শিক্ষামন্ত্রীর এই নেতিবাচক বক্তব্যে পরীক্ষার্থীদের ক্ষতি হলো। এর দায় কে নেবে? 

উল্লেখ্য, বিরোধীদের ঘাড়ে দায় চাপানোর জন্য আগেও চরম মিথ্যা প্রচারে সরাসরি যুক্ত ছিলেন ব্রাত্য বসু। ২০১০ সালে ২৮শে মে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পরদিনই ব্রাত্য বসুরা প্রেস ক্লাবে বলেছিলেন এই দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে সি পি আই (এম)। পরে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে ব্রাত্য বসুরা মিথ্যা কথা বলেছিলেন। মাওবাদী দুষ্কৃতীরাই সেই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিল। শিক্ষামহলের বক্তব্য, মন্ত্রী হবার পরে তাঁর স্বভাব বদলায়নি।

শিক্ষাবিদরা মনে করছেন ব্রাত্য বসু নিজের দায় আগেই ঝেড়ে ফেলে নিজের দলের কাছে বার্তা দিয়ে রাখলেন, যে আমি তো ‌আগেই বলেছিলাম এমনটা হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীকেও নতুন করে কোন ব্যাখ্যা দিতে হবে না। তিনি বলবেন, শিক্ষামন্ত্রী তো আগেই তাঁর আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন।

সোমবার পরীক্ষায় বসবে ১০ লক্ষ ৩৬ হাজার ৬৫৯জন পরীক্ষার্থী। ২৫৭১টি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণ হবে। গত দু’বছর মধ্যশিক্ষা পর্ষদে সর্বসময়ের জন্য কোন সভাপতি নিয়োগ হয়নি। প্রশাসক কল্যাণময় গাঙ্গুলি কাজ চালাচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন পরীক্ষা নির্বিঘ্নে গ্রহণ করার জন্য সমস্ত রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রশাসকের ওপর ভরসা রাখতে না পেরে মন্ত্রী এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করছেন বলে শিক্ষকমহল মনে করছেন।

No comments:

Post a Comment