(CLICK ON CAPTION/LINK/POSTING BELOW TO ENLARGE & READ)

Thursday, April 11, 2013

MALABIKA SARKAR, VICE CHANCELLOR, PRESIDENCY UNIVERSITY


কাউকে তুষ্ট করে উপাচার্য পদে থাকতে চাই না, বললেন উপাচার্য তৃণমূলের কাউন্সিলরের নেতৃত্বেই হামলা প্রেসিডেন্সিতে|

নিজস্ব প্রতিনিধি,গণশক্তি

কলকাতা, ১১ই এপ্রিল — শিল্পমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি যখন দাবি করছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাঙচুরের ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের কেউ ছিলো না তখন ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সেখানে তৃণমূলের কারা ছিল এবং কতটা অসত্য বলছেন তিনি। বুধবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাঙচুরের ঘটনায় শুধু তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রথম সারির নেতারা নন, উপস্থিত ছিলেন ৪০নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর পার্থ বসু। 

প্রতিবাদ মিছিলের নামে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে বুধবারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দেখা গেছে শহরের কিছু দাগী অপরাধীদের। যখন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণ চালাচ্ছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মীরা তখন পিছন থেকে তাদের নির্দেশ দিতে দেখা গেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সম্পাদক তমোঘ্ন ঘোষসহ কলকাতার তৃণমূলের বেশ কয়েকজন নেতাকে। দেখা গেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা তথাগত সাহাকে। বুধবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকল্পিত আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল আশ্রিত কর্মী, সমর্থকরা। বহিরাগতদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেকার ল্যাবরেটরি ভাঙচুর করা হয়। মারধর করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আর শিক্ষাকর্মীদের।

হাতে তৃণমূলের পতাকা নিয়েই আক্রমণ চালিয়ে গেছে বহিরাগতরা। সংবাদমাধ্যমে গোটা ঘটনা প্রকাশের পরেও তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জি বৃহস্পতিবার সগর্বে দাবি করেছেন, তৃণমূলের পতাকা থাকলে তৃণমূলের লোক হয় না। কিন্তু বৃহস্পতিবারে বিশ্ববিদ্যালয় হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই যুবক পুলিসকে পরিষ্কার জানিয়েছে তারা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী। তারা একজনও প্রেসিডেন্সির বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয়। এই ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে পরিকল্পিতভাবে বহিরাগতদের নিয়ে ঐতিহ্যমণ্ডিত বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। আর এই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ৪০নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলার পার্থ বসু, যা চিত্র সাংবাদিকদের তোলা ছবিতে স্পষ্ট দেখা গেছে।

এদিকে, দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাঙচুরের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রিপোর্ট তলব করলো রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কলকাতার পুলিস কমিশনারের কাছে ঐ রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেকার ল্যাবরেটরি ভাঙচুরের বিস্তারিত তদন্ত করে বুধবারের ঘটনায় কারা জড়িত জানতে চেয়েছে কমিশন। দু’সপ্তাহের মধ্যে ঐ তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার আলাদা তদন্ত করবে কমিশন। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায়কে কমিশন নিজেদের তদন্তের ভার দিয়েছেন। 

রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অশোককুমার গাঙ্গুলি জানিয়েছেন, শিক্ষাবিদ অমল মুখোপাধ্যায়কে তদন্তে সাহায্য করবেন কমিশনের এস পি আনাপ্পাই। কমিশনের তদন্তভার নিয়ে অমল মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্র ধরেই তদন্ত করে দেখা হবে। বুধবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের আক্রমণ আর ভাঙচুরের ঘটনায় কারা জড়িত সেই সম্বন্ধেই কমিশনের তরফে বিস্তারিত অনুসন্ধান চালানো হবে। 

পুলিসের সামনেই বহিরাগত দুষ্কৃতীরা কী করে প্রেসিডেন্সির মতো প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায় তাই নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন উপাচার্য মালবিকা সরকার। বুধবারের ঘটনায় রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ অধ্যাপিকা সরকার জানিয়েছেন, কোন রাজনৈতিক দল দেখে আমার অভিযোগ নয়। আমি বলছি যা আমি দেখেছি। আমি দেখেছিলাম তৃণমূলের দলীয় পতাকা হাতে আক্রমণকারী এসেছিলো। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তনী বর্তমানে উপাচার্য অধ্যাপিকা মালবিকা সরকার আরো জানান, কাউকে তুষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে থাকতে চাই না। 

অন্যদিকে, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণ করে সরকারী সম্পত্তি নষ্ট করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কর্মীদের মারধরের ঘটনায় বৃহস্পতিবার জোড়াসাঁকো থানায় এফ আই আর দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক প্রবীর দাশগুপ্ত। পুলিসের উপস্থিতিতে কী করে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটে তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দীর্ঘক্ষণ তাণ্ডব চালালো তা নিয়ে পুলিসের নিজেদের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ পার হলেই কলকাতা পুলিস সদর লালবাজার। সেখান থেকে কেন বাড়তি পুলিস ডেকে পাঠালেন না এলাকার দায়িত্বে থাকা ডেপুটি কমিশনার তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। হাতে লোহার রড নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে মারধরের ঘটার পরেও গোটা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত তদন্ত তো দূর, পুলিস বিষয়টি চেপে যেতে চাইছে। 

বৃহস্পতিবার এই নিয়ে সাংবাদিকরা বারংবার কলকাতা পুলিসের যুগ্ম কমিশনার(সদর) জাভেদ শামিমের কাছে জানতে চাইলে তিনিও দায়সারা উত্তর দিয়েছেন। তিনি জানান, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের হামলার ঘটনাটি কলকাতা পুলিসের সেন্ট্রাল ডিভিসনের ডেপুটি কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রতাপ সিং অনুসন্ধান করে দেখছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক প্রবীর দাশগুপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকারী সম্পত্তি বিনষ্ট আর মারধরের মামলা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে মারধরের একটি আলাদা অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেটিও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। দুটো অভিযোগকেই গুরুত্ব সহযোগে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ডেপুটি কমিশনার দেবেন্দ্রপ্রতাপ সিং। 

বিশ্ববিদ্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় বৃহস্পতিবার ধর্মতলা থেকে দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম শুভজিৎ বর্মণ(২১) এবং জয়ন্ত হালদার(২৪)। শুভজিৎ বর্মণের বাড়ি হাওড়ার বি-গার্ডেনে। অপরদিকে জয়ন্ত হালদার থাকে ক্যানিংয়ের শক্তিপল্লীতে। এরা আদৌ পড়াশোনার মধ্যে আছে কি না তাও পুলিস জানে না বলে দাবি করেছেন কলকাতা ডেপুটি কমিশনার (সেন্ট্রাল) দেবেন্দ্রপ্রতাপ সিং। তবে কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের হামলায় কী করে কলকাতার বাইরে থেকে লোক এলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ধৃতরা জেরায় জানিয়েছে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতারাই তাঁদের ১০ই এপ্রিল সকাল সকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে বলেছিলো। সেইমতোই তারা তাদের অন্যদের নিয়ে এসেছে।

No comments:

Post a Comment