(CLICK ON CAPTION/LINK/POSTING BELOW TO ENLARGE & READ)

Thursday, April 11, 2013

MAMATA INCITES VIOLENCE IN WEST BENGAL


‘ছেলেদের আটকানো যায়? প্রতিক্রিয়া হবেই’ সেই মোদীর সুরই যেন সুব্রতর কণ্ঠে|

নিজস্ব প্রতিনিধি, গণশক্তি

কলকাতা, ১১ই এপ্রিল — সুব্রত মুখার্জির উত্তেজনা হচ্ছে। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখার্জি নিজেই তা মহাকরণে সাংবাদিকদের বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন। ‘উত্তেজনা অনুভব করা’ সেই সুব্রত মুখার্জি রাজ্যজুড়ে তৃণমূল কর্মীদের উন্মত্ত সন্ত্রাসের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় এদিন বলেছেন, ‘‘ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর কী হয়েছিল? একটু মনে করতে বলবো। আমরা গান্ধীজী নই। নেতাজীও নই। ছেলেদের কতটা সামলে রাখবো? আমরা কী রোবোট কন্ট্রোল করি? ছেলেদের আটকানো যায়? আমরা কী মেপে মেপে করতে বলবো দলের কর্মীদের? তা কী হয়? মেপে মেপে মিছিল করা যায়?’’

দুষ্কৃতী ‘কন্ট্রোল’ করতে তিনি অর্থাৎ সুব্রত মুখার্জি কতটা দড়, আদৌ দড় কিনা— তা জানে ইতিহাস। জানে ১৯৭২-এর পরবর্তী সময়। জানেন কসবা, হালতু, বালিগঞ্জের সেই সময়ের মানুষ। তবে সুব্রত মুখার্জি মানে যে সে ব্যাপার নয়! ’৭২-’৭৭-এ রাজ্যে কংগ্রেস-পুলিসের যৌথ সন্ত্রাসে শহীদ হয়েছিলেন ১২০০জনের বেশি সি পি আই (এম) কর্মী। মুখ্যমন্ত্রীর তখ্‌তে ছিলেন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় ওরফে ‘মানুদা’। সংবাদপত্রে সেন্সরশিপ চালু হয়েছিল। মহাকরণে গিয়ে ছেপে বেরনোর আগে কাগজ দেখিয়ে নিয়ে আসতে হতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা পংক্তি থেকে কংগ্রেসী দুর্বৃত্তদের বর্বরতা— বাদ চলে যেত অনেক কিছুই। সেই আমলে জন্মসূত্রে জোতদার সুব্রত মুখার্জি ডাকসাইটে মন্ত্রী ছিলেন। তথ্য সংস্কৃতি, পঞ্চায়েত, স্বরাষ্ট্রের মত দপ্তরের মন্ত্রিত্ব সামলেছেন তিনি। 

নয়াদিল্লির ঘটনা থেকে ফায়দা তুলতে অনেকেই নেমে পড়েছেন। ধাক্কা লাগলো অমিত মিত্রর। কিন্তু কলকাতায় এসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। এই সময়ে একদিকে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি যখন নিজের জায়গা আরো পোক্ত করতে ব্যস্ত, তখন ইদানীং মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্টদের বৃত্ত থেকে ছিটকে যাওয়া সুব্রত মুখার্জিও নিজের হারানো নম্বর ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাই সত্তর দশকের সেই ফণার কিঞ্চিৎ বহিঃপ্রকাশ বৃহস্পতিবার মহাকরণে দেখা গেলো। একদা ‘তরমুজ’ বলে খ্যাত, এখন মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ট সুব্রত মুখার্জি এদিন বলেছেন, ‘‘রাজ্যে কোথায় হাঙ্গামা হচ্ছে? কোথায়? মুখ্যমন্ত্রীকে খুনের চেষ্টার পরে এ তো কিছুই না। মানুষ রোবোট নয়। আমি পুরানো লোক। আমারই উত্তেজনা হচ্ছে।’’ কিন্তু আপনারা তো শাসক দল। দায়িত্ব কী আপনাদেরই বেশি নয়? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুখার্জি বলেন, ‘‘দায়িত্ব আমাদের বেশি? আমরা কী রোবোট?’’

এক কথায় এই সব বক্তব্যকে ‘অসাধারণ’ বলতে পারেন যেকোন ফ্যাসিস্ত বা দাঙ্গাকারী। তাঁর এদিনের মন্তব্যে স্পষ্ট ছায়া নরেন্দ্র মোদীর সেই কুখ্যাত হয়ে ওঠা ভাষণ। গুজরাটে গণহত্যার সপক্ষে যুক্তিগ্রাহ্য মতামত সাজাতে মোদী নিউটনের তৃতীয় সূত্রটির জঘন্য প্রয়োগ করেছিলেন। গোধরা-কাণ্ডকে মুসলিম নিধনের অজুহাত হিসাবে খাড়া করতে গিয়ে মোদী বলেছিলেন, ‘‘প্রতিটি ঘটনারই সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে।’’ সুব্রত মুখার্জি এদিন বলেছেন, ‘‘আমরা কী ভগবান? আমরা ভগবান নই। মমতাকে নিয়ে রাজ্যে ‘অ্যাবনরমাল সেন্টিমেন্ট’ রয়েছে। ছেলেদের আটকানো যায়? আমরা কী মেপে মেপে করতে বলবো দলের কর্মীদের? তা কী হয়? মেপে মেপে মিছিল করা যায়?’’ তাহলে প্রতিটি ঘটনারই সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে? আপনি কী বলেন? এই নিরীহ প্রশ্নের জবাবে ’৭২-র মন্ত্রী, অবাধ গণ টোকাটুকির সেই যুগের ছাত্র পরিষদের নেতা সুব্রত মুখার্জির বক্তব্য, ‘‘বললাম তো, আমরা কী গান্ধীজী। নাকি নেতাজী? মেরেছো কলসির কানা, তা বলে কী প্রেম দেবো না — এ’ কথা কী বলা যায়? আমরা কী গৌর নিতাই?’’

এদিন সুব্রত মুখার্জির ডান হাতে কবজির কাছে অনেকটা জায়গা ক্রেপ ব্যান্ডেজ বেঁধে এসেছিলেন। তাঁর দাবি মঙ্গলবার যোজনা কমিশনের অফিসের সামনে ধাক্কাধাক্কিতে তাঁর হাতে লাগে। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে, তাঁর হাড়ে চিড় ধরেনি। ভেতরে কোন আঘাত নেই। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ভাঙচুর, হাঙ্গামার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,‘ ‘আমরা চিন্তিত। কারা করেছে? দলীয় স্তরে তদন্ত হচ্ছে। চক্রান্তের সম্ভবনা রয়েছে।’’ আর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা প্রসঙ্গে তাঁর মতামত, ‘‘জীবনে দেখিনি কোন অধ্যক্ষা ছাত্রদের আন্দোলনে শামিল হচ্ছে। মালবিকা সরকারের ইতিহাস-ভূগোল-বিজ্ঞানের খোঁজখবর নাও।’’

তাঁর বক্তব্য, ‘‘বুদ্ধ, বিমান বলছে শান্তি, শান্তি। আর ঋতব্রত, শতরূপের মত ফড়েদের ছেড়ে দিয়েছে। আমি শতরূপকে চিনতে পারিনি। তবে ঋতব্রতকে আমি চিনি। খুবই মারমুখী ছিল ঋতব্রত। ওদের এখুনি গ্রেপ্তার করা উচিত।’’

No comments:

Post a Comment