(CLICK ON CAPTION/LINK/POSTING BELOW TO ENLARGE & READ)

Sunday, April 28, 2013

MAMATA'S GOVERNMENT IS SARADHA'S GOVERNMENT: পরিবর্তিত সরকার, সারদা’র সরকার


পরিবর্তিত সরকার, সারদা’র সরকার

মৃদুল দে

কার সরকার? সারদা’র। বৃহস্পতিবার জাতীয় স্তরের এক ইংরেজি দৈনিকের শিরোনামা : সরকার ‘মা মাটি মানুষ, সারদা’র ...’ সঙ্গে আরেক শিরোনামা ‘মুখ্যমন্ত্রী যতই চেষ্টা করুন তৃণমূল-সারদা’র সম্পর্ক চাইলেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না’। কলকাতার স্টক এক্সচেঞ্জের কয়েকজন শীর্ষকর্তার হিসাবে, ‘সারদা’র অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য ১৭ হাজার কোটি টাকার’। সারদা’র মত ৬০টি ভুয়ো সংস্থা পশ্চিমবঙ্গে এখনও এই ধরনের লেনদেনের ব্যবসায় লিপ্ত। সব মিলিয়ে ১০ লক্ষ কোটি টাকা জড়িত। গত দু’বছরেই এদের রমরমা ব্যবসা। ভারতের সেরা কেলেঙ্কারিগুলির মধ্যে সারদা-তৃণমূল কেলেঙ্কারি প্রথম সারিতে স্থান করে নিতে পেরেছে। দু’বছরে পরিবর্তনের রেকর্ড। 

ভারতে যে সব দুর্নীতি-কেলেঙ্কারির সঙ্গে অ-বামপন্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিশেষত কংগ্রেস, বি জে পি এবং আঞ্চলিক দলগুলি জড়িয়ে পড়েছে, তার মধ্যে আছে টু জি স্পেকট্রামের লাইসেন্স বণ্টন। সরকারী সংস্থার হিসাবে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা সরকারী রাজস্বের ক্ষতি হয়েছে। ডি এম কে’র এক মন্ত্রী ও এক সাংসদ এবং কয়েকজন উচ্চপদস্থ অফিসার জেল খেটে এখন জামিনে। সংসদের চলতি অধিবেশন এখন তোলপাড় এর সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত ডি এম কে’র ঐ প্রাক্তন মন্ত্রীর পেশ করা রিপোর্টে প্রধানমন্ত্রীর অফিসের জড়িত থাকার অকাট্য প্রমাণাদি নিয়ে। দ্বিতীয়ত, ঘুরপথে বেসরকারী কোম্পানিগুলিকে কয়লার ব্লক বিক্রি-বাঁটোয়ারার ক্ষেত্রে ১.৮৭ লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি। প্রধানমন্ত্রীর এর সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে এবং সংবাদপত্রে তার নথিপত্র ফাঁস হয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা সি বি আই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে বাঁচাতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারা তিরস্কৃত হয়েছে। আদালত এবং সংসদ এ নিয়ে এখন উথাল-পাতাল। তিন, ২০১০ সালের কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কংগ্রেসী সাংসদ ও অফিসাররা জেল খেটে এসেছেন। চার, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সরকারী দপ্তরের সহায়তা নিয়ে ২০ হাজার কোটি টাকার ভুয়ো স্ট্যাম্প পেপার বিক্রির তেলগি-কেলেঙ্কারি দাগ এখনও মোছেনি। পাঁচ, কেন্দ্রীয় সরকারের নাকের ডগায় সত্যম কম্পিউটার সার্ভিস কোম্পানির গায়েব করা ১৪ হাজার কোটি টাকার ঘা এখনও শুকোয়নি। ছয়, সুইডেনের অস্ত্র নির্মাতা বোফর্স থেকে রাজীব গান্ধীর আমলে ১৭৫০ কোটি টাকার ঘুষ লেনদেনের কেলেঙ্কারি অনেক চেষ্টা করেও এখনও পর্যন্ত চাপা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এসম্পর্কে সম্প্রতি নতুন তথ্য ফাঁস হয়েছে। অনাবাসী ভারতীয় কোম্পানি হিন্দুজা এর সঙ্গে যুক্ত। সাত, ১৯৯৬ সালের ৯৯ কোটি টাকায় হাওয়ালা কেলেঙ্কারিতে (বর্তমান হিসাবে) কংগ্রেস, বি জে পি এবং অন্য কয়েকটি দলের শীর্ষনেতারা যুক্ত ছিলেন। বি জে পি আমলে তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়। সংসদ বা দেশের মানুষ এখনও কোনও সদুত্তর পায়নি। এছাড়া আছে হর্ষদ মেহতা ও কেতন পারেখের ৫০০০ কোটি টাকার স্টক মার্কেট বা শেয়ার কেলেঙ্কারি, বি জে পি আমলের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত তথা কফিন কেলেঙ্কারি, কর্ণাটকে খনি কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত বি জে পি’র মুখ্যমন্ত্রীর জেল খাটার প্রসঙ্গ। তালিকায় আছে আরো অনেক। কিন্তু সবগুলিকে হারিয়ে প্রায় শীর্ষস্থানে এরাজ্যের চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি। তবে যথেষ্ট মানানসই পরিবর্তনকামী রাজ্যের শাসকদল ও তার পরিচালিত সরকারের চরিত্রের সঙ্গে।

তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকারের দু’বছর পূর্ণ হতে চলেছে। এক বছর পূর্ণ হতে না হতেই মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, শতকরা ১০০ ভাগ প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়ে গেছে; পাঁচ বছরের কাজ এক বছরেই হয়ে গেছে। দু’বছর পূর্ণ হওয়ার আগের এক মাস চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর ঘটনায় ঠাসা। ৩১শে মার্চ, রবিবার ৪৫ লক্ষ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার পরীক্ষার্থীরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন অরাজক অবস্থা কাকে বলে। দু’দফায় পরীক্ষার পর এই তৃতীয় দফার পরীক্ষায় নাজেহাল হয়েছেন এবারের ‘টেট’ পরীক্ষার্থীরা। এর আগে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং জয়েন্ট এন্ট্রাস পরীক্ষায়ও প্রশ্নপত্র ফাঁস সহ বেনিয়মের অনেক ঘটনা ঘটেছে। বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছরে যা ঘটেনি, তা-ই ঘটছে। পরিবর্তন বৈকি। শুধু কি পরিবর্তন? চাঞ্চল্যকর পরিবর্তন!

বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে পঞ্চায়েত বলে কিছুই ছিল না। পৌর নির্বাচনের ঠিক-ঠিকানা ছিল না। সমবায়, স্কুল-কলেজ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনের কোনও বালাই ছিল না। বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসে গ্রামীণ জনগণের নির্বাচিত পঞ্চায়েত গড়তে আইনের আমূল সং‍‌শোধন করে এবং এক বছরের মধ্যেই ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ক্ষমতা ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে পঞ্চায়েতী ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হয়। পৌর, সমবায়, শিক্ষায় আইন সংশোধন করে গণতন্ত্রের সম্প্রসারণ ও নির্বাচিত সংস্থা গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। পাঁচ বছর পর পর পৌর ও পঞ্চায়েত সহ নির্দিষ্ট সময়ে অন্যান্য সংস্থাগুলির নির্বাচন সুনিশ্চিত করা হয়। বামফ্রন্ট আমলে কখনও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বিরোধীরাও নির্বিঘ্নে এবং মর্যাদার সঙ্গে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে ‘পরিবর্তনে’র নতুন সরকার সব কিছুই বদলে দেয়। পঞ্চায়েত নির্বাচন না করার জন্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে প্রকাশ্য সংঘাতে আসে। এই সংঘাতের মূল বিষয়, রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে বাদ দিয়ে আইনকানুনকে তুচ্ছজ্ঞান করে পুলিস-প্রশাসনকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করে সরকারের বকলমে শাসক দলই নির্বাচন পরিচালনা করতে চায়। তার আগে কয়েক মাস ধরে ‘বিরোধীরা প্রার্থী পাবে না’, ‘সর্বত্র বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল কংগ্রেসই জিতবে’ শাসক দলের নেতা ও মন্ত্রীদের এই হুঙ্কারের অর্থ পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ছিনতাই করে নেওয়া। সরকারের একতরফাভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের বেআইনী বিজ্ঞপ্তি জারির বিরুদ্ধে ১লা এপ্রিল নির্বাচন কমিশন শেষ পর্যন্ত আদালতের শরণাপন্ন হয়।

১লা এপ্রিলেই শিক্ষা দপ্তর সমস্ত বিদ্যালয়কে জানিয়ে দেয়, নির্বাচিত স্কুল পরিচালন কমিটি ভেঙে না দিলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে। এর আগে তৃণমূলের সশস্ত্র বাহিনী স্কুল কমিটি দখলের জন্য অসংখ্য হামলার ঘটনা ঘটায়। কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এই দুষ্কৃতীদের দখল করার অভিযান এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে গার্ডেনরিচে তৃণমূলী নেতার হাতে প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিস খুন হয়ে যায়। এটাকে অজুহাত করে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার পরিবর্তে কলেজ সংসদ নির্বাচনই সরকার বন্ধ করে দেয়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে ২রা এপ্রিল বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি ছাত্র সমাবেশ ও আইন অমান্য কর্মসূচী পালন করে। পুলিসী হেফাজতে নিহত হয় ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্ত। গোটা রাজ্যজুড়ে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। অনর্গল মিথ্যা বলায় ইতোমধ্যেই পারদর্শী মুখ্যমন্ত্রী পুলিসী হেফাজতে নিহত হওয়ার ঘটনাকে দুর্ঘটনা আখ্যা দিয়ে আরেক লজ্জাজনক নজির সৃষ্টি করেছেন। ৯ই এপ্রিল দিল্লিতে সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিক্ষোভ চলার সময় পুলিসী ব্যবস্থা অগ্রাহ্য করে অর্থমন্ত্রী এবং অন্যান্যদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিক্ষোভের মাঝখান দিয়ে যোজনা কমিশনের ভবনে ঢুকতে যান। কিন্তু অর্থমন্ত্রীকে ঘিরে হেনস্থার এক অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গেই সেই অবাঞ্ছিত ঘটনার তীব্র নিন্দা করে সি পি আই (এম)। এই ঘটনাকে ব্যবহার করে মুখ্যমন্ত্রী হুমকির মাধ্যমে গোটা পশ্চিমবঙ্গজুড়ে সি পি আই (এম)-র উপর হামলা ও সন্ত্রাসের প্ররোচনা দিতে হুমকি দেন, ‘‘সি পি এম-কে কে বাঁচায়, দেখে নেব’’। এই হুমকির জেরে কয়েকদিন ধরে রাজ্যজুড়ে সমস্ত জেলায় একযোগে পুলিসী নজরের মধ্যেই তৃণমূলী বাহিনী সি পি আই (এম) এবং বামপন্থীদের বিরুদ্ধে নৃশংস হামলা চালায়।

এই তৃণমূলী সন্ত্রাস ও অরাজকতার বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে অসংখ্য প্রতিবাদ, বিক্ষোভ কর্মসূচী যখন চলছে, তখন অন্য এক ধরনের বিক্ষোভেও গোটা রাজ্য উত্তাল হয়ে ওঠে। তৃণমূলী সরকার, কয়েকজন মন্ত্রী, সাংসদ ও নেতার ছত্রছায়ায় দু’বছর ধরে সারদা গোষ্ঠীর চিট ফান্ড ভিত্তিক বিরাট আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের বিক্ষোভ। সাধারণ মানুষের অর্থ লোপাট হয়েছে আনুমানিক ১৩ থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থদপ্তরের জ্ঞাতসারেই সব ঘটে যাচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তা এবং ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পের শীর্ষ অফিসাররাও সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বলে। এই রমরমা কারবারের কথা আগেই কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের নজরে এনেছিল। বিধানসভায় বামফ্রন্টের বিধায়করা এই গুরুতর বিষয়ে আলোচনা করতে চেয়ে তৃণমূল বিধায়কদের হাতে আক্রান্ত হন এবং দু’জন জখম বিধায়ক গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আর চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি বিস্ফোরিত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই কেলেঙ্কারির প্রতি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা এবং সরকারকেও কেলেঙ্কারির নায়কদের অবাধে ব্যবহারের ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র এজেন্ট এবং প্রতারিতদের কাছে এখন পরিষ্কার। এই কারণে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি, তৃণমূল দপ্তর ও সারা রাজ্যজুড়ে লক্ষ লক্ষ প্রতারিতের বিক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এই এক মাসেই এত কাণ্ড, প্রকাণ্ডতায় যা অতীতের কংগ্রেস শাসন বা এমনকি গত দু’বছরকেও ছাড়িয়ে গেছে। ‘পরিবর্তন’ বৈকি! প্রকাণ্ড ‘পরিবর্তন’! যত তৃণমূল-সারদা অশুভ আঁতাতকে ঢাকা দেবার চেষ্টা হচ্ছে, ততবেশি ভুল ও মিথ্যার বহরের মাত্রা রোজ বেড়ে চলেছে। আর সেইসঙ্গে গ্রাম ও গ্রামীণ গঞ্জ-শহরের প্রতারিত মানুষের ক্ষোভ-অসন্তোষের সীমাও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

রাজ্য সরকার যখন বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে, তখন কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থা এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সাহায্য নিয়ে এই গুরুতর অর্থনৈতিক অপরাধের সবটা খুঁজে বের করা জরুরী প্রয়োজন। এই অর্থ উদ্ধার করে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধ থেকে রাজ্যকে মুক্ত করা এবং সাধারণ মানুষকে রক্ষা করাও জরুরী।

গত দুই-তিন দশক ধরে দুর্নীতি কেলেঙ্কারি ও এই ধরনের আর্থিক অপরাধ বৃদ্ধির পিছনে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক নীতিও কম দায়ী নয়। নিয়ন্ত্রক হিসেবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং কেন্দ্রীয় অর্থদপ্তরের ‘সেবি’ দায়িত্ব পালন করেনি। আইনের ফাঁকে ২ কোটি বিনিয়োগকারীর ২৪,০০০ কোটি টাকা সাহারা কোম্পানি কামিয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট তা‍‌ ফেরত দেবার নির্দেশ দিয়েছে। সরকার ও সরকারী তত্ত্বাবধানে ব্যাঙ্ক পরিষেবা বাড়ানোর বদলে কেন্দ্রীয় সরকার তা সঙ্কুচিত করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি দেশের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন এবং জনগণের স্বার্থরক্ষার পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে বড় বড় পুঁজিপতি ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষার জন্য। সারদা সংস্থার নাড়ি-নক্ষত্র জেনেও স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক সহ সাতটি সরকারী ঋণদাতা সংস্থা সারদা গোষ্ঠীকে ১৮০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ব্যাঙ্কগুলির পুরো অর্থটাই এখন মার যাবে। বৃহৎ কোম্পানিগুলির কাছে ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণ হাজার হাজার কোটি টাকা, যা তামাদি হয়ে গেছে। আবার সরকার এদেরই কয়েক লক্ষ কোটি টাকা ভরতুকি দিচ্ছে। দেশের ১২০ কোটি মানুষের মধ্যে ১৭ কোটি লোকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে। কিন্তু বেশিরভাগই অচল অ্যাকাউন্ট। ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারী ও ঋণগ্রহীতারা দূর-দূরান্তের ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন না। ৭০ ভাগ গ্রামে কোনও ব্যাঙ্ক পরিষেবা নেই। যেখানে আছে, সেখানেও মানুষ হয়রানির শিকার হন। সহজ শর্তে কৃষকদের ঋণদান ব্যবস্থাও প্রতীকী গোছের। এই অবস্থায় সুদখোর মহাজন, এই ধরনের ভুঁইফোঁড় সংস্থা এবং বেসরকারী সংস্থার প্রলোভনের ফাঁদে পা দিচ্ছেন গ্রামের লক্ষ লক্ষ মানুষ। সরকারী স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের ৩৩ হাজার এজেন্ট মানুষের মধ্যে যে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে, তাদের এবং বেকার যুবকদের প্রলোভন দিয়ে লোক ঠকানোর এই কাজে ব্যবহার করা হয়। ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকারে তৃণমূল কংগ্রেস যোগ দেওয়ায় তাকে তৃণমূল নেতাদের জ্ঞাতসারেই প্রতারকরা অন্যান্য রাজ্যে ব্যবসা বাড়াতে ব্যবহার করে। এই প্রলোভনের দিকে ঠেলে দিতে রাজ্য সরকার যদি উৎসাহী হয়ে পড়ে ও সরকারকে ব্যবহারের সুযোগ যদি প্রতারক সংস্থাগুলি পায়, তাহলে অনায়াসে এই মৃত্যুফাঁদে জড়িয়ে যান সাধারণ মানুষ, যা বর্তমান তৃণমূলী রাজ্য সরকারের ক্ষেত্রে ঘটেছে। এর ফলে সরকারী স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলি শুকিয়ে মরেছে এবং প্রতারক সংস্থায় জীবনের সর্বস্ব সঞ্চয় ঢেলে এই বিরাট সংখ্যক মানুষ নিঃস্ব হয়ে কাতরাচ্ছেন। উদারীকরণের ভক্তবৃন্দরা, যেমন মিডিয়া, কিছু অর্থনীতিবিদ ও তথাকথিত সমাজসেবী বুদ্ধিজীবী এই বিরাট বিপর্যয় দেখেও আরো উদারীকরণের পক্ষে সওয়াল করে যাচ্ছেন। গত দুই-তিন দশকে রাজনীতিক, উচ্চপদস্থ সরকারী মহল এবং বৃহৎ ব্যবসায়ীরা কীভাবে অশুভ জোট গড়ে তুলেছে, তার আরেকটি নজির সংযোজিত হলো সারদা-তৃণমূল কাণ্ডের মধ্য দিয়ে। ‘পরিবর্তনে’র নজির? — মোহগ্রস্তদের ভাববার সময় কি এখনও আসেনি?

No comments:

Post a Comment