(CLICK ON CAPTION/LINK/POSTING BELOW TO ENLARGE & READ)

Sunday, April 28, 2013

NEW BILL TO CURB CHIT FUNDS IN WEST BENGAL: বামফ্রন্টের বিলকে অনুকরণ করেই আসছে নতুন বিল তাহলে কেন সময় নষ্ট, উঠছে প্রশ্ন


বামফ্রন্টের বিলকে অনুকরণ করেই আসছে নতুন বিল তাহলে কেন সময় নষ্ট, উঠছে প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিনিধি,গণশক্তি

কলকাতা, ২৭শে এপ্রিল— আগের বিলের থেকে কোনো বড় পরিবর্তন ছাড়াই বেআইনী চিট ফান্ড রুখতে নতুন আইনের বিল তৈরি করেছে তৃণমূল সরকার। আগামী মঙ্গলবার বিধানসভায় পেশ করার জন্য তৈরি করা এই নতুন বিলে রাজ্যপালের সম্মতি আদায় করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। কিন্তু ২০০৯ সালে বিধানসভায় পাস হওয়া বিলের থেকে নতুন বিলে উল্লেখযোগ্য বড় কোনো পরিবর্তনই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বেআইনী চিট ফান্ডের সঙ্গে জড়িতদের অপরাধ নির্ধারণ, বিচারস্থল বা আদালত নির্ধারণ, শাস্তিপ্রদান, সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া, ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে কার্যত বামফ্রন্ট সরকারের আমলের বিলটির অবিকল অনুকরণ করা হয়েছে নতুন বিলে। এসব ক্ষেত্রে দুটি বিলের বাক্য, শব্দ, অক্ষর, সবকিছুই হুবহু এক।

এবং অবশ্যই সকলের আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতে থাকা সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধারসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তির বিষয়টিতেও মূষিক প্রসব করেছে মমতা ব্যানার্জির সরকারের নতুন বিল। না, পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি যতই ‘রেট্রোস্পেকটিভ এফেক্ট’ দেওয়ার অস্বাভাবিক দাবি করুন না কেন, সুদীপ্ত সেনসহ সারদাকাণ্ডে জড়িত কোনো অপরাধীর শাস্তিদানের সুযোগ দেওয়া নেই নতুন বিলে। কেবলমাত্র সারদাগোষ্ঠীর সম্পত্তি আটক করে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নতুন আইনমাফিক হতে পারে।

নতুন বিলের এই সামান্য কিছু পরিবর্তন দেখে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর জন্য নতুন বিল এনে সময় নষ্ট করার দরকার কী ছিলো? এটা তো পুরনো বিলটিকে আইনে পরিণত করে পরবর্তী যে কোনো সময়ে অ্যামেন্ডমেন্ট বা সংশোধনী করে নিলেই হতো! 

বিধানসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ হাসিম আবদুল হালিম দুটি বিল দেখে বলেছেন, আগের থেকে কঠোর আইনের কথা বলে অযথা সময় নষ্ট করলো সরকার। লোকের চোখে ধুলো দেওয়া ছাড়া নতুন বিল আনার অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই। 

কী বলা আছে নতুন বিলে? নতুন কী যুক্ত করা হয়েছে আইন কঠোরতর করার নামে?

২০০৯ সালের পাস হওয়া বিলে রাজ্য সরকার একটি কম্পিটেন্ট অথরিটি বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলেছিলো যা আর্থিক সংস্থাগুলির ওপরে নজরদারি করবে। নতুন বিলেও সেই একই কথা বলা আছে, আগের বিলে জেলার কালেক্টরেটদের (জেলাশাসক, কলকাতায় পুলিস কমিশনার) শীর্ষে বসানোর কথা বলা হয়েছিলো, নতুন বিলে সরকার ‘ডিরেকটর অব ইকোনমিক অফেন্সেস’ নামের বিশেষ অফিসার বসাবে বলেছে। অবাস্তব প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ সংগ্রহের এবং তা ফেরত না দেওয়ার যে যে ধরনের কাজকে ২০০৯ সালের বিলে ‘অপরাধ’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিলো, নতুন বিলেও তাই করা হয়েছে। নজরদারির জন্য যে অধিকার সরকারী কর্তৃপক্ষকে আগের বিলে দেওয়া হয়েছিলো, নতুন বিলে তার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে আর্থিক সংস্থার অফিসে বা অন্যত্র তল্লাশি চালানোর অধিকারকে। এই তল্লাশি পর্বে সরকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসাররা বেআইনী কাজ হচ্ছে মনে করলে সংস্থার খাতাপত্র এবং সম্পত্তি সাময়িক আটক করতে পারবে, আদালতে পেশ করে সম্পত্তির মালিকানা অথবা পরিচালন দায়িত্ব কেড়ে নিতে (কনফিসকেট) পারবে। এই অংশটি নতুন। 

কিন্তু কোন আদালতে বিচার হবে? বামফ্রন্ট সরকারের বিলে বিশেষ ডেজিগনেটেড কোর্টের কথা বলা ছিলো। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি গত কয়েকদিন ধরে বলছিলেন, ‘বামফ্রন্ট সরকার যথেষ্ট কড়া ব্যবস্থা রাখেনি, কেন্দ্রীয় সরকার স্পেশাল কোর্টে বিচারের জন্য বলেছিলো।’ কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে নতুন বিলেও ডেজিগনেটেড কোর্টের কথাই বলা আছে, স্পেশাল কোর্ট নয়। কারণ রাজ্যজুড়ে এত বেশি সংখ্যক স্পেশাল কোর্টের ব্যবস্থা করা রাজ্য সরকারের পক্ষে বাস্তবে অসম্ভব। 

বামফ্রন্ট সরকারের বিলে বেআইনী কাজে যুক্ত আর্থিক সংস্থার সম্পত্তি আটক করে ডেজিগনেটেড কোর্টের অনুমোদনে তা বিক্রি করে ক্ষতিপূরণের যে ব্যবস্থা ছিলো নতুন বিলেও সেই ব্যবস্থাই রয়েছে। সংস্থার কাছে আমানতকারীদের প্রাপ্যের পরিমাণ যদি সংস্থার আটক সম্পত্তির থেকে বেশি হয়, তাহলে হস্তান্তরিত সম্পত্তিও আটক করার যে ব্যবস্থা ছিলো, নতুন বিলেও তাই আছে। সংস্থা মালিকের ব্যক্তিগত সম্পত্তি, সংস্থার অংশীদার, ডিরেকটর, ম্যানেজার, কর্মচারী, এবং অন্যান্য যারা সংস্থার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁদের সম্পত্তি আটক করে বিক্রির সংস্থানও আগের বিলের মতোই হুবহু একই রাখা আছে নতুন বিলে। অপরাধীর সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তির বিষয়টিও হুবহু এক। শুধুমাত্র আদালতের কাজের সময়সীমাকে এক বছর থেকে কমিয়ে ৬মাস করা হচ্ছে, যার মধ্যে আটক সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ের নিষ্পত্তি করা হবে।

এই সামান্য পরিবর্তনের জন্য নতুন বিল কি খুব জরুরী ছিলো? পুরনো বিলটির সামান্য সংশোধনীতেই তো সরকারের উদ্দেশ্যসাধন হতে পারতো! কালক্ষেপে নতুন আইনে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন না সুদীপ্ত সেনরা? নতুন বিলে রেট্রোস্পেকটিভ এফেক্টের কী হলো? বিলের ১৩ নম্বর ধারায় স্পষ্ট লেখা আছে, নতুন আইনটির কোনো ধারা আইনটি কার্যকরী হওয়ার আগেই আদালতে বিচার শুরু হয়ে গেছে এরকম কোনো মোকদ্দমায় প্রযোজ্য হবে না।

পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির দাবি, নতুন বিলে এমন ব্যবস্থা করা আছে, যাতে সারদাগোষ্ঠীর লোকজন এবং আরো পুরনো অপরাধীরাও ছাড় না পেয়ে যায়? 

কি সেই ব্যবস্থা? বিলের ২২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, যদি নতুন এই আইনটি কার্যকরী হওয়ার আগেই কমিশন অব ইনক্যুয়ারি অ্যাকট্‌ (১৯৫২)-র ৩নম্বর ধারা অনুসারে গঠিত কোনো কমিশন (অর্থাৎ শ্যামল সেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন) আইনটি কার্যকরী হওয়ার পরে সরকারের কাছে আর্থিক সংস্থাগুলির অপরাধ নিয়ে কোনো রিপোর্ট দেয়, তাহলে সম্পত্তি আটক বা দখল করার বিষয়ে এই আইনটি ব্যবহার করা যাবে।

অর্থাৎ সম্পত্তি আটকের বিষয়ে নতুন আইন প্রয়োগের সুযোগ রাখা হলেও শাস্তিদানের ক্ষেত্রে নতুন আইন প্রয়োগের কোনো সুযোগই নেই।


No comments:

Post a Comment